জেনে নিন নবজাতক শিশুর জন্ডিস কেন হয়





নবজাতকের জন্ডিস মানে হলো তার রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হওয়া। মানব শরীরে রক্ত কণিকা ভেঙে বিলিরুবিন তৈরি হয়। আর লিভারে তা ক্ষুদ্র কণিকায় রূপান্তরিত হয়ে পায়খানার মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। সাধারণভাবেই
নবজাতকের বিলিরুবিন একটু বেশি থাকে। এটাই স্বাভাবিক। এ জন্যই বলা হয়, প্রতিটি শিশুই জন্মের পরপর জন্ডিসে আক্রান্ত হয়। বিভিন্ন কারণে নবজাতকের জন্ডিস হতে পারে। এসব কারণে জন্ডিস হলে তা মারাত্মক জটিলতাও তৈরি করতে পারে। নিচে  নবজাতকের জন্ডিসের কারন তুলে ধরা হলো --


ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিসঃ
বয়স্কদের চেয়ে শিশুর দেহের রেড সেল ভলিউম বা লোহিত রক্তকণিকা বেশি থাকে। এই রক্তকণিকার স্থায়িত্ব কম থাকে। তাই লোহিত কণিকা ভেঙে বিলিরুবিন বেশি তৈরি হয়। লিভার পুরোপুরি কার্যক্ষম হয় না বলে শরীরে বিলিরুবিন জমে যায়। তাই নবজাতকের
জন্ডিস বেশি হয়।

হেমোলাইটিক এনিমিয়াঃ
এ ক্ষেত্রে নবজাতক রক্তশূন্য হয়ে পড়ে। তার লিভার ও প্লীহা বড় হয়ে যায়। চোখ বেশি হলুদাভ হয়। যথাসময়ে চিকিৎসা না হলে  নবজাতকের লিভার ফেইলিওর হতে পারে। লিভার সিরোসিসও হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে শিশুটি মৃত্যুমুখে পতিত হতে পারে।

রক্তের গ্রুপজনিত জন্ডিসঃ
নবজাতকের বা শিশুর রক্তের গ্রুপ যদি পজিটিভ, আর মায়ের নেগেটিভ গ্রুপের হয়-এ ক্ষেত্রে বিপজ্জনক ধরনের জন্ডিস হতে পারে। এ ছাড়া মায়ের রক্ত পজিটিভ হলেও এ ধরনের বিপদ ঘটতে পারে।

ইনফেকশনঃ
নবজাতকের রক্তে ইনফেকশন ছড়িয়ে গেলে একে সেপটিসেমিয়া হয়। এটি হলে ও জন্ডিস হয়। এ ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে ৭ থেকে ১০ দিনের মতো সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করাতে হয়।

প্রি-ম্যাচুরিটি শিশুঃ
অপরিণত বয়সে জন্ম হলে নবজাতকের জন্ডিস হতে পারে। মাত্রা বেশি হলে ফটোথেরাপি দিতে হবে। আবার জন্ডিসের মাত্রা কম হলে (১৪ মি.গ্রা./ ডেসিলিটারের নিচে হলে) সূর্যের আলোতে ভালো হয়ে যায়।

মায়ের ডায়াবেটিসঃ
কোনো নবজাতকের মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে জন্মগ্রহণের পর নবজাতকের জন্ডিস হতে পারে। এ ক্ষেত্রে নবজাতকের শর্করা লেভেল স্বাভাবিক রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে 'রাউন্ড দ্য ক্লক ফিডিং' বা ঘন ঘন বুকের দুধ দিতে হবে।

হাইপো থাইরাডিজমঃ
এ ক্ষেত্রে বুকের দুধ খেলেই জন্ডিস হয়। এ ক্ষেত্রে শিশুর থাইরয়েড হরমোন রিপ্লেসমেন্ট করাতে হয়।

এ ছাড়া কিছু কারণ রয়েছে যে জন্য জন্ডিস হয়। যেমন-এনজাইম ডিফেক্ট বা লিভার ব্লকেজ থাকলে, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অসম্পূর্ণ বা অরগান ডিফেক্ট থাকলে, নবজাতকের পিত্তথলিতে কোনো সমস্যা থাকলে, গ্লুকোজ সিক্স ফসফটাস এনজাইম ডিফিসিয়েন্সি থাকলে, পাইলোরিক স্টেনোসিস বা পাকস্থলীতে খাদ্য নির্গমনে কোনো বাধা থাকলেও জন্ডিস হতে পারে।

সূত্রঃ ডা. খালেদ নূর, সহযোগী অধ্যাপক,
ঢাকা পেডিয়াট্রিক ও নিউনেটাল
হাসপাতাল।
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...