নবজাতক শিশুর জন্ডিস হলে কি করবেন






প্রায় সব নবজাতকের জন্ডিস হয়। এতে অনেকেই আতঙ্কে ভোগেন। কিন্তু অনেকেই জানেন না নবজাতকের জন্ডিস হলে কী করতে হয়? তাই আজকের টিপস নবজাতকের জন্ডিস ৷

কেন এই জন্ডিস হয়ঃ
নবজাতকের জন্ডিস মানে হলো তার রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হওয়া। মানব শরীরে রক্ত কণিকা ভেঙে বিলিরুবিন তৈরি হয়। আর লিভারে তা ক্ষুদ্র কণিকায় রূপান্তরিত
হয়ে পায়খানার মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। সাধারণভাবেই নবজাতকের বিলিরুবিন একটু বেশি থাকে। এটাই স্বাভাবিক। এ জন্যই বলা হয়, প্রতিটি শিশুই জন্মের পরপর জন্ডিসে আক্রান্ত হয়। অবশ্য এর কারণও আছে।

গর্ভে শিশু যখন বড় হয় তখন মায়ের শরীরের সঙ্গে সংযুক্ত প্লাসেন্টারের মাধ্যমে এই বিলিরুবিন তার দেহ থেকে বের হয়ে যায়। তখন গর্ভস্থ শিশুর লিভারকে বিলিরুবিন ভাঙতে কাজ করতে হয় না। কিন্তু জন্মের পরপর তা করতে হয়। এ সময় লিভার পুরোপুরি কার্যক্ষম হতে সময় লাগে। এ কারণেই নবজাতকের কিছু সময়ের জন্য হলেও জন্ডিস দেখা দেয়।
আর এসময় বেশির ভাগ নবজাতকের ত্বক হলদেটে হয়ে যায়। চোখের সাদা অংশও হলদেটে হয়। এর কারণ বিলিরুবিন হলদে রঙের পদার্থ। আর এটাই নবজাতকের জন্ডিস হিসেবে পরিচিত। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে বিলিরুবিনের মাত্রা নির্ণয় করা যায়। যদি রক্তে অতিরিক্ত বিলিরুবিন পাওয়া যায়, তবে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

সাধারণত জন্মের প্রথম চার সপ্তাহ বা ২৮ দিন বয়স পর্যন্ত সময়কালকে নিউনেটাল পিরিয়ড বলা হয়। এ বয়সের শিশুরাই নবজাতক হিসেবে পরিচিত। নবজাতকের জন্ডিস নিয়ে মা-বাবারা
বেশ চিন্তিত থাকেন। তবে সময়মতো চিকিৎসা নিলে এবং কিছু নিয়ম মেনে চললে নবজাতকের জন্ডিস ঠিক হয়ে যায়।


জন্ডিসের লক্ষনঃ
* নবজাতকের শরীর হলুদাভ হয়ে যায়।
* প্রথমে মুখ হলুদাভ হয়। আস্তে আস্তে
শরীর হলুদ হবে, এমনকি হাত ও পায়ের
তালু পর্যন্ত হলুদ হয়ে যায় ৷
* শিশু দুধ পান করে না।
* পেট ফুলে যায়।
* নড়াচড়া কম করে।
* শরীরে তীব্র জ্বর থাকতে পারে।
আবার শরীর অতিরিক্ত ঠাণ্ডাও হয়ে
যেতে পারে।
* কোনো কোনো ক্ষেত্রে খিঁচুনিও হতে
পারে।

প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাঃ
জন্ডিসের মাত্রা ও কারণ নির্ণয়ের জন্য শিশুবিশেষজ্ঞের পরামর্শক্রমে নবজাতকের রক্তের প্রয়োজনীয় কিছু পরীক্ষা করাতে হয়। যেমন-রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা এবং তা প্রত্যক্ষ না পরোক্ষ তা নির্ণয়, মা ও নবজাতকের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা, কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট, কুম্বস টেস্ট, রেটিকুলোসাইট কাউন্টসহ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা।

চিকিৎসা কখন লাগে?
সাধারণত জন্মগত কারণে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ জন্ডিস পরিলক্ষিত হয়। এসবের বেশির ভাগই ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস
বা সাধারণ জন্ডিস। এ ক্ষেত্রে বয়স্কদের চেয়ে শিশুর দেহের রেড সেল ভলিউম বা লোহিত রক্তকণিকা বেশি থাকে। এই রক্তকণিকার স্থায়িত্ব কম থাকে। তাই লোহিত কণিকা ভেঙে বিলিরুবিন বেশি তৈরি হয়। লিভার পুরোপুরি কার্যক্ষম হয় না বলে শরীরে বিলিরুবিন জমে যায়। তাই নবজাতকের জন্ডিস বেশি হয়। ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিসের ক্ষেত্রে নবজাতককে প্রতিদিন আধা ঘণ্টা করে ১০ দিন সূর্যের আলোতে রাখলেই ভালো হয়ে যায়। তবে জন্ডিসের মাত্রা বেশি মনে হলে (বিলিরুবিন ১৪ বা তার বেশি হলে) হাসপাতালে এনে ফটোথেরাপি দিতে হয়।
নবজাতকের রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা কেমন, শিশু কত সপ্তাহে জন্ম গ্রহণ করেছে, বিলিরুবিন কী পরিমাণে বাড়ছে তার ওপর চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা নির্ভর করে।

নবজাতকের জন্ডিস হলে সাধারণত বেশি করে বুকের দুধ খাওয়াতে হয়। এতে বারবার পায়খানা হয়, পায়খানার মাধ্যমে শরীরে জমে থাকা বিলিরুবিন বের হয়ে যায়। হাসপাতালে চিকিৎসা হিসেবে সাধারণত ফটোথেরাপি প্রয়োগ করা হয়।
এক ধরনের বেগুনি আলোর মধ্যে, হালকা গরম আবহাওয়ায় শিশুটিকে কিছু সময়ের জন্য রাখতে হয়। শিশুকে সাধারণত চোখ ঢেকে দেওয়া হয়। শিশুর শারীরিক অবস্থা ঠিক থাকলে এ সময়ও কিছুক্ষণ পরপর বুকের দুধ পান করানো উচিত। বেশির ভাগ শিশু এক থেকে দুই দিন ফটোথেরাপি পেলেই ভালো হয়ে যায়। তবে নবজাতকের বিলিরুবিন যদি অতিমাত্রায় বাড়তে থাকে, তবে হাসপাতালে চিকিৎসা করানো উচিত। এ সময় শিশুকে রক্ত দেওয়ারও প্রয়োজন হতে পারে।

কখনো কখনো ইন্ট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবিউলিনও লাগতে পারে।
মনে রাখা দরকার, বিলিরুবিনের অতি মাত্রা "শিশুর মস্তিষ্কের ক্ষতি" করতে পারে। জটিলতার মধ্যে আছে- সেরিব্রাল পালসি, কান নষ্ট হয়ে যাওয়া, কার্নিকটেরাস ইত্যাদি। তবে এগুলো খুব অল্প দেখা যায়।

আপনি যদি মনে করেন পোস্টটি গুরুত্বপূর্ণ তবে শেয়ার করে বন্ধুদের দেখার সুযোগ দিন। আপনাদের সুখী জীবনই আমাদের কাম্য। ধন্যবাদ।

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...